ঢাকা, ৯ মার্চ (কুইকপোস্ট নিউজ)
চীন বিশ্বকে চমকে দিয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৮৩০০ কোটি পাউন্ড বা ১১ লাখ কোটি টাকা) একটি বিশাল সবুজ প্রযুক্তি তহবিল ঘোষণা করেছে, যা বৈশ্বিক বিনিয়োগের মানচিত্রে নতুন ঝড় তুলেছে। গত শুক্রবার বেইজিংয়ে চীনের পরিবেশ ও পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক সম্মেলনে এই পরিকল্পনা উন্মোচন করা হয়। সিনহুয়া নিউজ জানায়, এই তহবিলের লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনকে নবায়নযোগ্য শক্তি, সৌর প্যানেল, বায়ু শক্তি, বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং ব্যাটারি প্রযুক্তিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানে নিয়ে যাওয়া। তহবিলের ৬০% চীনের অভ্যন্তরীণ প্রকল্পে এবং ৪০% আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় ব্যয় হবে, যার মধ্যে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত। চীনের এই পদক্ষেপ আমেরিকা ও ইউরোপের প্রতিযোগীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে, যারা সবুজ প্রযুক্তির দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে। ব্লুমবার্গ রিপোর্টে বলা হয়, চীন ইতোমধ্যে বিশ্বের ৬০% সৌর প্যানেল, ৫০% বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং ৭০% লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদন করে।
- যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭% শুল্কে বাংলাদেশের রপ্তানি হুমকির মুখে
- সেনাবাহিনী-রাজনীতির দোলাচলে বাংলাদেশ: আবারও কি মাইনাস ফর্মুলার পথে?
এই তহবিল চীনের কার্বন নির্গমন ২০৩০ সালের মধ্যে শীর্ষে পৌঁছানো এবং ২০৬০ সালে শূন্যে নামানোর প্রতিশ্রুতির অংশ। ২০২৪ সালে আমেরিকার ৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্লিন এনার্জি ফান্ড এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৩০ বিলিয়ন ইউরোর গ্রিন ডিলকে ছাপিয়ে চীন এখন সবুজ বিনিয়োগে অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চীন থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি হয়েছে, যার মধ্যে সৌর প্যানেল, ব্যাটারি এবং শক্তি সঞ্চয়ের যন্ত্রাংশ উল্লেখযোগ্য। গত বছর চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ২০০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি হয়, যা চট্টগ্রামে চলমান। ঢাকার পরিবেশবিদরা বলছেন, এই তহবিল বাংলাদেশের জন্য সাশ্রয়ী সবুজ প্রযুক্তি আমদানির সুযোগ তৈরি করতে পারে। তবে উদ্বেগও রয়েছে—চীনের এই আধিপত্যে আমেরিকা ও ইউরোপ বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বাড়তে পারে। এক্সে বাংলাদেশি ব্যবহারকারীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন—কেউ লিখেছেন, “চীনের সবুজ প্রযুক্তি আমাদের জলবায়ু লড়াইয়ে সাহায্য করবে,” আবার কেউ বলছেন, “চীনের দাপটে আমরা আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়ব।” চীনের পরিবেশ মন্ত্রী হুয়াং রানকিউ বলেছেন, “এই তহবিল শুধু চীনের জন্য নয়, বিশ্বের জলবায়ু সংকট মোকাবিলার জন্য।” তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এটি চীনের অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের জন্য এটি সুযোগ ও ঝুঁকি দুই-ই। আমাদের নিজস্ব সবুজ শিল্প গড়তে হবে।” পরিবেশ ও অর্থনীতি ভারসাম্য রাখা এখন বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ। এই সবুজ দৌড়ে চীনের জয় কতটা টেকসই হবে—সেটাই এখন বিশ্ব দেখছে।