ঢাকা, ৬ মার্চ (কুইকপোস্ট নিউজ)

গত বছর জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষা খাতে ব্যাপক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ফেব্রুয়ারিতে বলেছেন, “শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক, সুষ্ঠু ও সবার জন্য উন্মুক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য।” এই লক্ষ্যে গত জানুয়ারিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি ১২ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, যারা জাতীয় শিক্ষানীতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করছে। তবে অর্থনৈতিক সংকট, অবকাঠামোর দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই সংস্কার বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রত্যাশা বেশ উঁচু। তারা চান পাঠ্যক্রমে সৃজনশীলতা ও বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা বাড়ানো হোক, শিক্ষকদের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ চালু করা হোক এবং গ্রামীণ এলাকায় ডিজিটাল শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি পাক। গত মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সেমিনারে শিক্ষাবিদ ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, “শিক্ষায় পরিবর্তন আনতে হলে প্রথমে শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে।”

কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের খবর এসেছে। অর্থনীতিবিদরা জানাচ্ছেন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হলে বর্তমান বাজেটে ২০% বৃদ্ধি প্রয়োজন, যা অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে কঠিন। এছাড়া, গ্রামীণ স্কুলগুলোতে ইন্টারনেট ও বিদ্যুতের অভাব ডিজিটাল শিক্ষার স্বপ্নকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, তারা শিক্ষার্থী আন্দোলনের চেতনাকে সম্মান জানিয়ে একটি ‘শিক্ষা সনদ’ তৈরির পরিকল্পনা করছে, যা জুলাই অভ্যুত্থানের দাবিগুলোর প্রতিফলন ঘটাবে। তবে সমালোচকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে এত বড় সংস্কার সম্ভব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। শিক্ষা সংস্কার কি সত্যিই নতুন দিনের সূচনা করবে, নাকি চ্যালেঞ্জের কাছে হার মানবে—সেটাই এখন দেখার বিষয়।