কুইকপোস্ট নিউজ | ২৪ মার্চ, ২০২৫ | ঢাকা
গত কয়েকদিনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠে যে ঘটনাপ্রবাহ ঘটছে, তা যেন এক অজানা অন্ধকারের দিকে দেশকে ঠেলে দিচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর থেকে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। দ্বিতীয় দিনে ড. ইউনূস স্পষ্ট জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। এরপর তৃতীয় দিনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে দাবি করেন, সেনাপ্রধানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে এবং ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই দাবি ঘিরে দলের ভেতরে-বাইরে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। এনসিপির আরেক নেতা সারজিস আলম এবং মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী হাসনাতের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। এমনকি এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ পর্যন্ত বলেছেন, ‘দুজনের একজন মিথ্যা বলছেন। এটা চলতে পারে না।’
এই ঘটনার সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগ। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পিনাকী ভট্টাচার্য এবং এলিয়াস হোসেনের মতো ব্যক্তিদের নাম উঠে এসেছে, যাঁরা কথিতভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনতাকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এর পাশাপাশি ইসলামি চরমপন্থীদের সক্রিয়তা নিয়েও আলোচনা চলছে। অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট জিল্লুর রহমান এবং আল-জাজিরার সাংবাদিক জুলকার নাঈন সায়ের দাবি করেছেন, চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে এবং বর্তমান সরকারকে নির্বাচন বাতিলে বাধ্য করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এমনকি সদ্য গঠিত এনসিপি এবং এসডিএ নামক গোষ্ঠীকেও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
এরই মধ্যে গত ২৩ মার্চ দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে ‘জুলাই অভ্যুত্থানে অগ্রগামী নারী’ শীর্ষক এক সেমিনারে ১০ জন নারী শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা দেওয়া হয়। সেখানে তাঁরা জুলাই অভ্যুত্থানে স্বজন হারানোর হৃদয়বিদারক ঘটনা তুলে ধরে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। এই ঘটনা যেন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা কতটা জরুরি। কিন্তু একই সময়ে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং অপপ্রচারের ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করে।
- যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫% নতুন শুল্কে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধাক্কা: ভবিষ্যত কী?
- যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭% শুল্কে বাংলাদেশের রপ্তানি হুমকির মুখে
- সেনাবাহিনী-রাজনীতির দোলাচলে বাংলাদেশ: আবারও কি মাইনাস ফর্মুলার পথে?
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৪ মার্চ রাজধানীর লেডিস ক্লাবে বিএনপির মিডিয়া সেল আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও আমরা দেখেছি, সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে, ঠিক একইভাবে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করানোর চেষ্টা হচ্ছে। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো ষড়যন্ত্র আছে।’ তিনি সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকতে আমাদের সহায়তা করুন। আমরা অতীতে দেখেছি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছে।’ তাঁর এই বক্তব্যে দেশের স্থিতিশীলতা ও ঐক্যের প্রতি তাঁর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ পায়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একই দিনে একই ইফতার মাহফিলে বলেন, ‘দেশ নিয়ে আবারও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ একই দিনে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সেনা কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে বলেন, ‘নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এতে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না।’ তাঁর এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, সেনাবাহিনী এই সংকটে শান্ত থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যাঁরা এই গুজব ও অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে কাজ করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য কী?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সেনাবাহিনী ও রাজনীতির সম্পর্ক বরাবরই স্পর্শকাতর। অতীতে ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার মতো ঘটনা আমরা দেখেছি, যেখানে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দিয়ে একটি নিয়ন্ত্রিত রাজনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছিল। আজকের এই পরিস্থিতি কি সেই পথে যাচ্ছে? হাসনাত আবদুল্লাহর মতো তরুণ নেতাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য শুধু বিভ্রান্তিই সৃষ্টি করছে। সেনাসদর ইতিমধ্যে হাসনাতের দাবিকে ‘রাজনৈতিক স্টান্টবাজি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তবু এই ঘটনা যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
আমরা মনে করি, এই মুহূর্তে প্রয়োজন সংযম ও সত্যের প্রতি দায়বদ্ধতা। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং জনগণের মধ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। সাংবাদিক ও গণমাধ্যমেরও দায়িত্ব রয়েছে সঠিক তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করার। দেশের এই ক্রান্তিকালে আমরা কি আবারও অস্থিরতার দিকে যাব, নাকি ঐক্যের পথে এগিয়ে যাব—সেটি নির্ভর করছে আমাদের সকলের বিচক্ষণতার ওপর।
উৎসঃ
- আনন্দবাজার পত্রিকা
ওয়েবসাইট: www.anandabazar.com - দৈনিক ইত্তেফাক
ওয়েবসাইট: www.ittefaq.com.bd - প্রথম আলো
ওয়েবসাইট: www.prothomalo.com - বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)
ওয়েবসাইট: www.bbs.gov.bd - বাংলা উইকিপিডিয়া
ওয়েবসাইট: bn.wikipedia.org - বাংলা নিউজ১৮
ওয়েবসাইট: bengali.news18.com - কালের কণ্ঠ
ওয়েবসাইট: www.kalerkantho.com - বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)
ওয়েবসাইট: www.bssnews.net/bangla - বাংলা একাডেমি
ওয়েবসাইট: www.banglaacademy.gov.bd - জাতীয় গ্রন্থাগার (বাংলাদেশ)
ওয়েবসাইট: www.nlb.gov.bd