কুইকপোস্ট নিউজ | ৪ এপ্রিল, ২০২৫ | ঢাকা


যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা দেশের পোশাক খাতসহ রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ২ এপ্রিল ঘোষিত এই “পারস্পরিক শুল্ক” নীতি ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। সব আমদানির ওপর ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্কের সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য ৩৭ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক যোগ হয়েছে, যার ফলে মোট শুল্কের হার দাঁড়িয়েছে ৪৭ শতাংশ। এর আগে বাংলাদেশি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক, যুক্তরাষ্ট্রে কম বা শূন্য শুল্কে প্রবেশ করত, যদিও ২০১৩ সালে শ্রম অধিকার সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়েছিল।

শুল্ক নির্ধারণের পদ্ধতি: যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির ভিত্তিতে এই শুল্ক নির্ধারণ করেছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৫১০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যেখানে আমদানি ছিল ২১০ কোটি ডলার, ফলে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ৩০০ কোটি ডলার। ট্রাম্প প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, এই ঘাটতি (৫১০ কোটি – ২১০ কোটি) ÷ ৫১০ কোটি ≈ ৫৮%, যা অর্ধেক করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রাম্প এটিকে “উদারতা” বললেও, অর্থনীতিবিদরা এই পদ্ধতিকে অযৌক্তিক বলছেন। তারা মনে করেন, বাণিজ্য ঘাটতি দেশের বিশেষায়ন বা প্রতিযোগিতার ফল, শুধু শুল্কের নয়। এই শুল্ক নীতি জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার্স অ্যাক্টের আওতায় কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই কার্যকর করা হয়েছে।

শুল্ক আরোপের কারণ: ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছে, বাংলাদেশ আমেরিকান পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা তারা “অন্যায্য বাণিজ্য” হিসেবে দেখছে। তবে, বাংলাদেশের গড় শুল্ক ১৪ শতাংশ (এমএফএন), এবং ভ্যাট ও প্যারা-ট্যারিফসহ কিছু পণ্যে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালে ১২০ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে ট্রাম্পের “লিবারেশন ডে” নীতি এই শুল্ক আরোপ করেছে। তারা বলছে, এটি আমেরিকান উৎপাদন ও চাকরি রক্ষার জন্য। তবে সমালোচকরা বলছেন, এই ঘাটতি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক নীতি, যেমন বাজেট ঘাটতির কারণে, শুধু বাণিজ্য বাধার জন্য নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মুদ্রা ম্যানিপুলেশনের অভিযোগ তুলেছে, কিন্তু আইএমএফের তত্ত্বাবধানে থাকা বাংলাদেশের এমন সক্ষমতা নেই।”

এই শুল্ক নীতি ৬০টিরও বেশি দেশের উপর ধার্য করা হয়েছে, যেখানে চীনের ওপর ৫৪ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ২০ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশের ১০০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি বাজার, যার বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায় যা এখন চাপে। শিল্প নেতারা বলছেন, এই শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়বে, যা বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা কমিয়ে দেবে। ভারত, যারা ২৬ শতাংশ শুল্ক পেয়েছে, এখন সুবিধা পেতে পারে। অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান বলেন, “এই শুল্ক বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য কঠিন হবে।” এই শুল্ক বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এমএফএন নীতি লঙ্ঘন করে, যা প্রতিশোধমূলক। বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা ও কৃষিপণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। জনমত অনুযায়ী, “এই শুল্ক আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করবে,” অন্যরা বলছেন, “আমাদের কূটনৈতিকভাবে সমাধান খুঁজতে হবে।” আরও তথ্যের জন্য কুইকপোস্টের সাথে থাকুন।