কুইকপোস্ট নিউজ | ঢাকা | ১৯ মার্চ ২০২৫
ঢাকা মহানগরীর ১২৯টি ওয়ার্ডে প্রশাসক ও কমিশনার নিয়োগে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সমন্বিত প্রচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যবেক্ষকরা স্বচ্ছতা ও যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তারা সতর্ক করে বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ স্থানীয় শাসন ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করতে পারে এবং বাংলাদেশে নতুন অশান্তির সূচনা করতে পারে।
এই উদ্বেগের মূলে রয়েছে এমন খবর যে, সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) নামে একটি দল কথিতভাবে ওয়ার্ড পর্যায়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের বসানোর চেষ্টা করছে। সমালোচকদের মতে, প্রতিষ্ঠিত নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে এভাবে অনুগতদের নিয়োগ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করতে পারে এবং রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতির পথ খুলে দিতে পারে। একজন স্থানীয় বাসিন্দা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “যদি তারা যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে তাদের লোক বসায়, তাহলে দেশে নতুন অস্থিরতার ক্ষেত্র তৈরি হবে।”
এর মধ্যে একটি নির্বাচনী এলাকায় গত ডিসেম্বরে গঠিত একটি কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একজন উদ্বিগ্ন নাগরিক জানিয়েছেন, এই কমিটির সদস্যদের নির্বাচন প্রক্রিয়া বা জুলাই-আগস্টে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুই স্পষ্ট নয়। এখন তারা নিজেদের এনসিপির সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করছে এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় অস্বচ্ছল ভোটারদের জন্য ঈদ সহায়তা বিতরণের পরিকল্পনা করছে। “তারা বলছে, সিটি করপোরেশন টাকা দেবে, আর এনসিপি বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু জনগণের টাকা কেন একটি রাজনৈতিক দলের হাতে যাবে?” – এই প্রশ্ন তুলেছেন ওই বাসিন্দা।
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কমিটির সদস্যরা এই সহায়তা বিতরণকে সিটি করপোরেশন ও এনসিপির যৌথ উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা জানিয়েছে, সিটি করপোরেশনঅর্থ বরাদ্দ ও অর্থায়ন করবে, আর তারা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে। এই ব্যবস্থাপনা অনেকের কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে। “অর্থের প্রবাহ কে নিয়ন্ত্রণ করবে? কারা ‘অস্বচ্ছল’ তা কে ঠিক করবে? এটা ক্ষমতা দখলের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে,” বলেছেন একজন মন্তব্যকারী।
- সেনাবাহিনী-রাজনীতির দোলাচলে বাংলাদেশ: আবারও কি মাইনাস ফর্মুলার পথে?
- ডিজিএফআই-এর সাহসিকতায় বন্ধ হলো ভারতীয় গোয়েন্দাদের টেলিফোন নজরদারির পরিকল্পনা
- বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: বিপ্লব পরবর্তী পদক্ষেপ ও ব্যর্থতার কারণসমূহ
এই ঘটনা শুধু একটি ওয়ার্ডে সীমাবদ্ধ নয়। মোহাম্মদপুরের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, তাদের এলাকাতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, “ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীন প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটিতেই একই কাহিনি—অস্বচ্ছ কমিটি, এনসিপির দাবি, আর এখন জনগণের টাকা তাদের হাতে।” তিনি প্রমাণ হিসেবে স্ক্রিনশটও যুক্ত করেছেন।
জনগণের প্রতিক্রিয়া তীব্র হয়েছে এবং জবাবদিহিতার দাবি জোরালো হচ্ছে। বাসিন্দারা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও এনসিপির কাছে এই কমিটির বৈধতা, তাদের ক্ষমতার উৎস এবং জনগণের তহবিলের তদারকি নিয়ে উত্তর চাইছেন। “এভাবে চললে এটা শুধু ঈদ সহায়তার বিষয় নয়—এটা ওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণ আর ভোটারদের প্রভাবিত করার খেলা,” বলে অনুমান করেছেন একজন নাগরিক।
২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল হয়নি। নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে স্থিতিশীল করতে হিমশিম খাচ্ছে। জুলাইয়ের আন্দোলন থেকে উঠে আসা এনসিপি নিজেদের নতুন বিকল্প হিসেবে দাবি করলেও, স্থানীয় শাসনে তাদের দ্রুত সম্পৃক্ততা তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা এখনো এই অভিযোগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি এবং এনসিপিও কোনো বিবৃতি দেয়নি। পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, বাসিন্দারা বেশি স্বচ্ছতা ও জনগণের অংশগ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন, যাতে ঢাকার ইতোমধ্যে ভঙ্গুর নাগরিক কাঠামোতে রাজনৈতিক অতিরিক্ত প্রভাবের নতুন অধ্যায় শুরু না হয়।