কুইকপোস্ট নিউজ | ঢাকা | ২০ মার্চ ২০২৫
ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ১১ মার্চের গোপন বৈঠকের কথা এখন ফাঁস হয়ে পড়েছে, যা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছে। এই বৈঠকে আওয়ামী লীগকে “রিফাইন্ড” আকারে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা উত্থাপিত হয়। NCP এর হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রথমে তার ফেসবুক পোস্টে এই তথ্য ফাঁস করেন, সেনাবাহিনীর ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে। পরে ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা পিনাকী ভট্টাচার্য, যিনি বাংলাদেশে মব ভায়োলেন্স উসকে দিয়ে অস্থিতিশীল করার জন্য পরিচিত, একই তথ্য তার পোস্টে তুলে ধরেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে—১১ মার্চের কথা এখন কেন? আগে কেন বলা হয়নি? কী পাওয়ার কথা ছিল, আর কী পাওয়া যায়নি বলে এখন এই কথা বলা হচ্ছে?
হাসনাতের ফাঁস করা তথ্য
হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, ১১ মার্চ দুপুর ২:৩০-এ ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটি বৈঠক হয়, যেখানে তিনি এবং সার্জিস আলম উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনী প্রস্তাব দেয় যে, আওয়ামী লীগকে “রিফাইন্ড” আকারে পুনর্বাসন করা হবে। এই দলটি সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন এবং তাপসকে সামনে রেখে গঠিত হবে। এপ্রিল-মে থেকে তারা শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, শেখ হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ভিত্তিতে নতুন আওয়ামী লীগ গঠনের প্রতিশ্রুতি দেবে।
হাসনাত আরও জানান, সেনাবাহিনী দাবি করে যে একাধিক রাজনৈতিক দল শর্তসাপেক্ষে এই প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। তাদের যুক্তি, একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ভালো। হাসনাত এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে “ষড়যন্ত্র” হিসেবে চিহ্নিত করেন।
হাসনাতের ক্ষোভ, সার্জিসের নীরবতা
বৈঠকের সময় হাসনাত সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি ওয়াকারকে সতর্ক করে বলেন, “আপনি এটা করলে ৫ তারিখের উল্টো ইমেজ তৈরি হবে আপনার। সারা দেশে ভিলেন হয়ে যাবেন।” কিন্তু সার্জিস আলম পুরো সময় নীরব থাকেন, কোনো সমর্থন বা বিরোধিতা জানান না। ওয়াকার উদাসীনভাবে জবাব দেন, “আই কেয়ার নাথিং! কে কি বলল আমার যায় আসে না।” এই ঘটনা সেনাবাহিনীর উপর গুরুতর অভিযোগ এনেছে, কারণ তারা জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে বলে মনে হচ্ছে।
ফ্রান্সে অবস্থানরত পিনাকী ভট্টাচার্য, যিনি বাংলাদেশে মব ভায়োলেন্সকে উসকে দিয়ে অস্থিতিশীল করার জন্য পরিচিত, হাসনাতের পোস্টের পর একই তথ্য তার ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেন। তিনি লিখেন, “আমি শুরু থেকেই এই ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছি।” পিনাকী দাবি করেন, এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের।”
পিনাকী আরও অভিযোগ করেন, ওয়াকার এখন আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন এবং ছাত্রদের বিরুদ্ধে চরিত্র হনন ও দুর্নীতির নিউজগুলো তার মাধ্যমেই প্রচারিত হচ্ছে। হাসনাত ও পিনাকীর পোস্টে একই তথ্য থাকায় এই ঘটনার সত্যতার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। পিনাকী ওয়াকারকে সতর্ক করে বলেন, “নাটক কম করো পিও! মাসুদ যেমন ভালো হয়নি, তুমিও ভালো হবা না।” তিনি ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে বলেন, “তালবেরগিরি কীভাবে জয় বাংলা করতে হয়, সেটা ৩২ নম্বরে দেখিয়ে দিয়েছি! শিরীন শারমিন আর প্রীতির মারাও তাই না? সাহস ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত সাহস ভালো না! খালেদ মোশাররফও সাহস দেখাইছিলো।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আওয়ামী লীগ আর ফিরবে না, ফিরতে দেওয়া হবে না।”
কী পাওয়ার কথা ছিল, কী পাওয়া যায়নি?
হাসনাত ও সার্জিস সম্ভবত এই বৈঠকের পর সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কিছু আশ্বাস বা রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার কথা ভেবেছিলেন। বৈঠকে সেনাবাহিনী আসন সমঝোতার প্রলোভন দেখিয়েছিল, যা হাসনাত ও সার্জিসের দলের জন্য রাজনৈতিক লাভের সুযোগ হতে পারত। কিন্তু সেই আশ্বাস বা সুবিধা তারা পাননি। এছাড়া, সেনাবাহিনী তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, যা হাসনাত বা তার দলের রাজনৈতিক লক্ষ্যের জন্য হুমকি।
অন্যদিকে, পিনাকী, যিনি বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য পরিচিত, এই তথ্য ফাঁস করে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ জাগিয়ে দেশে অরাজকতা তৈরি করতে চাইতে পারেন। তার “ইন্ডিয়া আউট” ক্যাম্পেইনের সঙ্গে এই ঘটনাকে যুক্ত করে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে জনমত গড়তে চাইছেন। তাই, যে রাজনৈতিক প্রভাব বা জনসমর্থন তারা পাওয়ার কথা ভেবেছিলেন, তা না পেয়ে এখন এই তথ্য ফাঁস করছেন।
অশনি সংকেত
ক্যান্টনমেন্টে ১১ মার্চের গোপন বৈঠকের তথ্য এখন ফাঁস হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্ট। তবে এই ধরনের বক্তব্য পাবলিকলি তুলে ধরার পেছনে অবশ্যই কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে, যা জাতির জন্য কখনোই ভালো হবে না। এটি দেশে অস্থিতিশীলতা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে, যা জনগণের ঐক্য ও অগ্রগতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।